Things Fall Apart by Chinua Achebe
এক নজরে চরিত্রসমূহঃ
পার্ট ১
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ওকোনকুয়ো, উমুয়োফিয়া ক্ল্যানের যে গ্রামগুলো রয়েছে সেগুলোতে বেশ বিখ্যাত। কারণ সে দীর্ঘদিনের পুরনো চ্যাম্পিয়ন এমালিনজকে পরাজিত করেছে। এই এমালিনজে এত বার জিতেছে যে তার ডাক নামই ছিল “দা কেট”। এর পেছনে কারণ হলো বিড়ালের ব্যাপারে কথিত আছে যে যত উপর থেকে ফেলেননা কেনো বিড়াই কখনোই পিঠের দিকে পরে না। আর এমালিনজ নামের এই রেসলারও ঠিক তেমনই ছিলো। তাকে পিঠের দিকে উল্টে ফেলানো যেতো না। ওকোনকুয়ো খুবই শক্তিশালী, কঠোর পরিশ্রমী আর সে পুরুষালী ভাব ধরে রাখে, নিজের কোনো দূর্বলতা প্রকাশ করেনা। সে তার বাবার পুরোই বিপরীত হতে চেয়েছে সব সময়। তার বাবা অলস ছিলো, ধার দেনা করে রেখেছে, স্ত্রী সন্তানদের গুরুত্ব দেয় নি, অবহেলা করেছে। আর তিনি ছিলেন কাপুরুষ, মেয়েলী স্বভাবের।
এজন্য সে তার বাবার বিপরীত হতে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছে। তার নিজস্ব সম্পদ বানিয়েছে। তার বাবার লজ্জাজনক মৃতুবরণ করেছিলো আর অনেক ঋণ রেখে গিয়েছিলো। কিন্তু ওকোনকুয়ো পুরুষালি বৈশিষ্ট্য পছন্দ করে। কোনো ভাবেই নিজেকে দূর্বল হিসেবে প্রকাশ করতে চায় না সে। আর এ কঠোরতা প্রকাশ করতে সে প্রায়ই তার স্ত্রী ও সন্তানদের মারধর করে আর প্রতিবেশীদের সাথেও কঠোর আচরণ করে।
তার বাবার বিপরীত হওয়ার এ আপ্রাণ চেষ্টা তাকে সম্পদশালী করেছে, তাকে সাহসী করেছে এবং তাকে গ্রামের সবার মধ্যে ক্ষমতাবান করেছে। সে সমাজে নিজের অবস্থান বানানোর যে স্বপ্ন লালন করতো তা সে গ্রামের লিডার হয়ে পূরণ করেছে।
একবার উমুয়োফিয়া (ওকোনকুয়োর গ্রাম) গ্রামের এক মহিলাকে অন্য আরেক ক্ল্যানের এক লোক হত্যা করে ফেলে। ফলে বিচার হয় এবং শাস্তি স্বরুপ সেই লোকের ছেলে ইকিমেফুনা ও এক মহিলাকে দেওয়া হয় ওকোনকুয়োদের গ্রামকে। আর গ্রামের বয়স্করা মিলে ছেলেটাকে ওকোনকুয়োর বাড়িতে রাখতে দেয় যাকে তিন বছর পর বলি দেওয়া হবে। ওকোনকুয়োন নিজের যে ছেলে রয়েছে সে ছিলো মেয়েলি স্বভাবের আর অলস। তার দাদার মত। তাই তাকে ওকোনকুয়ো কম দেখতে পেতো। কিন্তু এই নতুন ছেলেটা ইকিমেফুনা কঠোর পরিশ্রমি ছিলো। তাই শীঘ্রই সে ওকোনকুয়োর প্রিয় হয়ে উঠলো। তবে ওকোনকুয়ো তাকে বুজতে দিতো না ব্যাপারটা না হলে মানুষ তাকে দূর্বল ভাববে।
আর সেই ছেলেটাও ওকোনকুয়োকে তার দ্বিতীয় বাবা ভাবতো। কিন্তু উমুয়োফিয়ার ভবিষ্যত বক্তার পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসলো যে সেই ছেলেটাকে হত্যা করার সময় চলে আসছে। গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি ইজিউডু ওকোনকুয়োর কাছে গেলো আর তাকে সব বললো। আর তাকে সাবধান করে বললো যে তোমার সে আয়োজনে থাকার দরকার নেই। কারণ ছেলেটা তিন বছর তোমার এখানে ছিলো। তাকে হত্যা করা নিজের সন্তানকে হত্যা করার মত মনে হবে।
কিন্তু ওকোনকুয়ো ভাবলো সে যদি দুরে থাকে মানুষ তাহলে তাকে দূর্বল ভাববে। মেয়েলী বৈশিষ্ট্য অর্থ্যাৎ কোমল মনের অধিকারী ভাববে। তাই সেই বরং ইকেমেফুনাকে হত্যার দায়িত্ব নিলো। মৃত্যুর পূর্বে ছেলেটা তাকে বাবা করে বলছিলো আর তার কাছে আত্বরক্ষার জন্য সাহায্য চাইছিলো কিন্তু ওকোনকুয়ো তাকে হত্যা করলো। তার মৃত্যুর পর অনেকদিন পর্যন্ত ওকোনকুয়োর মনে অপরাধবোধ কাজ করছিলো, মন দুঃখ ভারাক্রান্ত ছিলো। সে ব্যাপারটা ভুলতে পারছিলোনা। এর তার কিছুদিন পর থেকেই সব কিছু থেকেই ওকোনকুয়োর জন্য খারাপ যেতে লাগলো।
সে খুব ডিপ্রেশনে পড়ে গেলো। সে কোনো ভাবেই নিজ হাতে সন্তানতুল্য ইকেমেফুনাকে হত্যার ব্যাপারটা ভুলতে পারছেনা। এর মাঝে তার মেয়ে এজিনমা হঠ্যাৎই খুব অসুস্থ হয়ে গেলো। মনে হচ্ছিলো এজিনমা বোধ হয় আর বাচঁবে না। শুধু এটাই নয়, তার জন্য অপেক্ষা করছিলো আরো বড় বিপদ। গ্রামের যে সবচেয়ে বয়স্ক লোকটা ছিলো ইজিউডু সে মারা যাওয়ার পর তার শেষকৃত্য হচ্ছিলো। সেখানে অসর্তকতায় চাপ পড়ে ওকোনকুয়োর বন্দুক থেকে গুলি বেড়িয়ে যায় আর সেই ইজিউডুর ছেলেও মারা যায়। এজন্য ওকোনকুয়ো আর তার পরিবার কে নিজ গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়। তারা গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে তার মামার বাড়ি, সাত বছর তারা এখানে থাকবে দেবতাদের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার কারণে।
পার্ট ২
ওকোনকুয়ো যখন তার মামা বাড়ি মবান্টায় থাকাকালীন জানতে পারলো যে তার নিজের গ্রাম উমুয়েফিয়াতে শেতাঙ্গ মানুষেরা তাদের খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার করতে এসেছে। ধীরে ধীরে ধর্মান্তরিতদের সংখ্যা ও সে গ্রামে খ্রিস্টান প্রচারকারীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলো। তাই তারা সেখানে নতুন শাসনতন্ত্র চালু করেছে। ধীরে ধীরে এমন হয়ে গেলো যে তাদের তৈরি আইন মানতে গ্রামের মানুষ বাধ্য হয়ে গেলো।
শুরুতে আমরা জেনেছিলাম যে ওকোনকুয়োর ছেলে নওউয়ি ছিল তার দাদার মত। তাই তাকে বেশ মারতো ওকোনকুয়ো। সে খুব শীঘ্রই মিশনারীদের প্রতি ও তাদের নতুন ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলো। তার বাবার মারধরের জন্য সে পূর্বে থেকেই চাইতো আলাদা হয়ে স্বাধীন হয়ে জীবন যাপন করতে। তাই যাজক মিস্টার ব্রাউনের কাছে সে ধর্মান্তরিত হয়ে গেলো। এই ধর্ম যাজক মিস্টার ব্রাউন বয়স্ক আর ভালো মানুষ ছিলেন। কাউকে জোর করতেন না। কিন্তু তিনি অসুস্থ হলে তার জায়গায় রেভেন্ডে স্মিথ নামে একজন আসেন যিনি খুব ক্রিটিকাল মাইন্ডেড ছিলেন।
নির্বাসনের শেষ বছর ওকোনকুয়ো তার বেস্ট ফ্রেন্ড ওবিএরিকাকে তার সব ইয়ামস (মিষ্টি আলুর মত এক ধরনের ফল) বিক্রি করতে দেয় আর লোক নিয়ে তার গ্রামে তার জন্য দুটো ঘর বানাতে বলে যেন সে সেখানে গিয়ে পরিবার নিয়ে উঠতে পারে। এখানে তার বন্ধু সমন্ধে একটু বলে নেওয়া দরকার। তার গ্রামের তার এই একজন বন্ধু যে তার এখানে আসতো। তাকে সাহায্য করতো। আপডেট দিতো। শান্তনা দিতো। কাজ কর্মে সাহায্য করতো। তো তাকে ঘর বানানোর দায়িত্ব দিয়ে পরবর্তীতে ওকোনকুয়ো তার মামা বাড়ির গ্রামের লোকদের নিয়ে খুব খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করলো কৃতজ্ঞতা স্বরুপ। কারণ তারা তাকে আশ্রয় দিয়েছে, ঘর দিয়েছে। কাজ করার জমি দিয়েছিলো। সেখানে তারা তাদের গোত্রের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করলো।
পার্ট ৩
নির্বাসন থেকে গ্রামে ফিরে ওকোনকুয়ো দেখলো যে শেতাঙ্গদের জন্য তার গ্রামে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একদিন এক ধর্মান্তরিত ব্যাক্তি একজন ব্যক্তির মাস্ক খুলে ফেলে, যে ব্যক্তিটির উপর দেবী/ আত্মা ভর করে কথা বলতো। মাস্ক খুলে ফেলা একটা বড় অপরাধের মধ্যে একটি। ব্যাখ্যা। ফলে প্রতিশোধ স্বরুপ গ্রামের বেশ কিছু মানুষ মিলে খ্রিষ্টানদের চার্চে আগুন লাগিয়ে দিলো। সে অপরাধের ফলে শেতাঙ্গরা যে আইন বা শাসনতন্ত্র তৈরি করেছিলো, সেই ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার আসলো আর ওকোনকুয়ো সহ বেশ কিছু ক্লানের লিডারদের ধরে নিয়ে গেলো এবং তাদের জেল হলো। জেল খানায় তাদের অনেক অপমান করা হয় আর প্রচুর মারধর করা হয়। শেষে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে উল্লে্খ্য যে, ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার জানতেন এই ক্ল্যানদের ঐতিহ্যের কথা। এরা যে সবাই ক্লানের সম্মানিত ব্যক্তি সেজন্য তিনি গার্ডদের জানিয়েছিলেন যে তাদের সাথে যেনো ভালো ব্যবহার করে, মারধর না করে। কিন্তু সেই কোর্টের বার্তাবাহক তাদের অপমান ও মারধর করেছিলো। আর তাদের ন্যাড়া করে দিয়ে ছিলো। তাই তারা বের হওয়ার পর বড় বিদ্রোহ করার প্রস্তুতি নিতে লাগলো। ওকোনকুয়ো জন্মগত ভাবেই একজন লড়াকু ছিলো। আমরা জেনেছিলাম যে সে পুরুষালি স্বভাবে। বিদ্রোহ, অপমানের প্রতিশোধ তার রক্তে রয়েছে। গ্রামের ঐতিহ্যে, সংস্কৃতির ধারক বাহক সে। তাই সে কাপুরুষতা ঝেড়ে ফেলে শেতাঙ্গদের বিরুদ্ধের যুদ্ধের পরামর্শ দিলো সবাইকে।
শেতাঙ্গদের যে সরকারতন্ত্র তার বার্তাবাহক এই ক্লান লিডারদের মিটিং থামানোর চেষ্টা করেছিলো। তাই রাগের বসে দুই বার্তাবাহকের মধ্যে একজনকে ওকোনকুয়ো হত্যা করে ফেলে। তবে ওকোনকুয়ো লক্ষ্য করে দেখলো তাদের আরেকজনকে পালাতে সাহায্য করেছে বাকিরা। আর তার নিজের লোকজন আর তার পাশে থেকে লড়াই করছে না। তারা তাদের নিজেদের আস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য লড়ছে না। তাদের ঐতিহ্য ছিলো ক্লান লিডারকে অনুসরণ করা কিন্তু তারা তা আর করছে না। তাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি বদলে যাচ্ছে। এজন্যই হয়তো নোভেলের নাম হয়েছে থিংস ফল এপার্ট।
এরপর ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার ওকোনকুয়োর বাড়ি আসেন তাকে গ্রেফতার করতে। এসে দেখেন যে ওকোনকুয়ো আত্বহত্যা করেছে ফাস লাগিয়ে। এখন উমুয়োফিয়ার লোকজন অর্থ্যাৎ ওকোনকুয়োর মানুষের কাছে ওকোনকুয়ো একজন ঘৃণিত মানুষ কারণ তাদের ইবো/ইগ্বো রীতি বা ঐতিহ্য অনুযায়ী আত্বহত্যা কঠোরভাবে নিষেধ। এর ফল স্বরুপ তার সমস্ত মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হল।
সেই ডিসট্রিক্ট কমিশনার ও তার লোকজন তার লাশ সৎকারে ব্যবস্থা করতে লাগলো। আর তিনি ইবো সোসাইটির এই অদ্ভুদ নিয়ম দেখে অবাক হলেন। আর তিনি নাইজেরিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে বই লিখছিলেন যার নাম হলো The Pacification of the Primitive Tribes of the Lower Niger তাতে এই ঘটনা উল্লেখ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন।