John Donne’s Life and Work

John Donne Life and Work

জন ডানের জীবন ও সাহিত্যকর্ম

সমাজ পরিবার ও ব্যক্তি বিধৃত জীবনকে শুধুমাত্র উচ্ছ্বসিত ভাবাবেগের পরিবর্তে মূখ্যত বুদ্ধিসচেতন, বিশ্লেষণধর্মী, দার্শনিক মনােভঙ্গি নিয়ে উপলব্ধির প্রয়াস জন ডান-এর অভিষ্ট লক্ষ্য ছিল। জীবনের হতাশা নিরাশা, ধূসর ভবিষ্যতের ঊষর মরুতে বিচরণ না করে তিনি জীবনকে তৃণে-শস্যে, ফুলেফসলে সফল দেখতে চান। আর এই মানসে তিনি প্রত্যয়ী, পরিশ্রমী। তাঁর প্রত্যয়ী মনােভাব তাঁকে পৌছে দিয়েছে খ্যাতির উচ্চাসনে। তিনি আবিষ্কার করলেন স্বতন্ত্র কাব্যধারা। ম্যাটাফিজিক্যাল’ কবিতা।
ম্যাটাফিজিক্যাল কবিদের গুরু জন ডান জন্ম করেন ১৫৭২ সালে লন্ডনে। তিনি ছিলেন তার বাবা মায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তার মাও ছিলেন শিল্প-সাহিত্য ঘেঁষা পরিবারের সদস্যা। তাঁর মা ছিলেন নাট্যকার John Heywood-এর বােন। জন ডান-এর পিতা একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। যখন জন ডান-এর বয়স মাত্র চার বছর তখন তাঁর বাবা পরপারে পাড়ি জমান। জন ডান শিক্ষা জীবন কাটিয়েছেন অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজে। তবে ধর্মীয় কারণে তিনি ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি।
ব্যক্তিগত জীবনে জন ডান ছিলেন উচ্চাভিলাষী। প্রেমের ক্ষেত্রেও তাই। প্রেম ছিল এক অভিজাত পরিবারের কন্যার সাথে এবং এই প্রেমের কারণে তাঁকে কিছুদিন জেলও খাটতে হয়েছিল।
আগেই বলা হয়েছে যে, অক্সফোর্ড ক্যামব্রিজের মতাে জগদ্বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশােনা করেও শুধুমাত্র ধর্মীয় কারণে তিনি ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি। পরে ডান ধর্মের উপর লেখাপড়া করেন, ধর্মান্তরিত হন। তিনি ক্যাথলিক ধর্ম ত্যাগ করে অ্যাংলিকান ধর্ম গ্রহণ করেন। এর পর তিনি পাদ্রী এবং বিখ্যাত গির্জা সেন্টপলস্-এর উপাচার্যও হয়েছিলেন। কোনাে ইংরেজ কবির পক্ষে গির্জার উপাচার্য হওয়ার ঘটনা বিরল। ধর্মের উপর পড়াশােনা, পাদ্রী এবং শেষ অবধি গির্জার উপাচার্য হওয়ায় জন ডান-এর জীবনে ধর্ম গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল। তিনি ছিলেন ধর্মানুরাগী। তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি আরও বেশি ধর্মানুরাগী হয়ে পড়েন।
যে সময় জন ডান কাব্য চর্চায় হাত দেন সে সময় এলিজাবেথীয় যুগের সহজ সাবলীল কাব্য ধারার অস্তায়মান অবস্থা। কাব্য হয়ে উঠল বুদ্ধির দীপ্তিতে প্রােজ্জ্বল। যুক্তি নির্ভর গণিত, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন এসব চলে এল কবিতার পাতায়। আসল উদ্ভট কল্পনা আর উদ্ভট উপমা। আর এই ধারার কবিদেরকে ব্যঙ্গ করে বলা হতাে ‘ম্যাটাফিজিক্যাল পােয়েটস্’ যার অর্থ হচ্ছে ‘দার্শনিক কবিদল। এই কবি গােষ্ঠীর কেহই দার্শনিক ছিলেন না। তবে এদের কবিতায় দার্শনিকসুলভ ভাব-ভাষা, শব্দ, উপমা ব্যবহার হতাে বলেই এদের এরূপ নামকরণ। আর জন ডান হচ্ছেন ম্যাটাফিজিক্যাল কবিদের অগ্রদূত।
জন ডান ছিলেন উইলিয়াম শেকসপীয়র, ক্রিষ্টোফার মার্লো, এডমন্ড স্পেন্সর এদের মতাে শক্তিমান কবিদের সমসাময়িক। ফলে তাঁকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে কাব্য জগতে নিজের স্বতন্ত্র আসন গড়ে নিতে।
কারণ তখন এসব কবিরাই তাে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। স্পেন্সরের শত শত সনেট তখন প্রকাশিত হচ্ছে। জন ডান ছাড়াও ম্যাটাফিজিক্যাল কবিদের মধ্যে রয়েছেনঃ

 

কবিসময়কাল
জর্জ হারবার্ট১৫৯৩–১৬৩৩
রবার্ট হেরিক১৫৯১–১৬৭৪
জন সাকলিং১৬০৯–১৬৪২
রিচার্ড ক্র্যাশ১৬১৩–১৬৪৯
রিচার্ড লাভলেস১৬১৮–১৬৫৭
আব্রাহাম কাউলে১৬১৮–১৬৬৭
এ্যান্ড্রু মারভেল১৬২১–১৬৭৮
হেনরি ভন১৬২১–১৬৯৫

খ. জন ডান মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে, ৩১শে মার্চ ১৬৩১ সালে। জন ডান এর গ্রন্থগুলাের নাম নীচে দেয়া হলােঃ

  1. সিওডু মার্টার ১৬১০ সাল
  2. এন এনাটমি অব দি ওয়ার্ল্ড (ফাস্ট এ্যানিভার্সারি) ১৬১১ সাল
  3. এ্যানিভার্সারিজ ১৬১১-১৬১২ সাল
  4. লাভস আলকেমি, হােলি সনেটস্ ১৬০৭-১৬১২ সাল
  5. অব দি প্রগ্রেস অব দি সৌল ১৬১২ সাল
  6. কনসেইটস্ ডেথস ডুয়েল ১৬৩১ সাল
  7. সংস এ্যান্ড সনেট ১৬৩৩ সাল
  8. বাইয়াথানাটোস্ ১৬৪৪ সাল
    1. শেষ দুটি বই হচ্ছে গদ্য রচনা।
জন ডানের কবিতার জগতে তাঁর কবিতায় বিষয় বৈচিত্র এবং উপমার বৈচিত্র সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্যণীয়। ম্যাটাফিজিক্যাল কবিতার বৈশিষ্ট্যানুসারে তিনি উদ্ভট উপমা টানলেও তার পর পরই যুক্তির জোরে (জোরের যুক্তি নয়) উপমাটাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন নিপুণ দক্ষতায়। The Good Morrow’ কবিতায় কবি বলেছেনঃ

‘My face in thine eye, thine in mine appears,
And true plain hearts do in the faces rest,
Where can we find two better hemispheres
Without sharp north, without declining west?
Whatever dies, was not mixed equally.’

আবার “A Valediction : Forbidding Mourning’ কবিতায় তাদের দুই প্রেমিক প্রেমিকাকে কম্পাসের দুই বাহুর সাথে তুলনা করেছেন এবং এর পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন মজবুতঃ

‘If they be two, they are two so
As stiff twin compasses are two,
The soul the fixed foot, makes no show
To move, but doth, if the other do.
And though it in the centre sit,
Yet when the other far doth roam,
It leans, and hearkens after it,
And grows erect, as that comes home.’

এই কবিতারই শেষ স্তবকে কবি বলেছেন যে, কম্পাসের একটি বাহু স্থির থাকে, স্থান পরিবর্তন করে না বলেই অপর বাহু চারদিক ঘুরে সঠিকভাবে বৃত্ত অঙ্কন করতে পারে। অর্থাৎ তাঁর প্রেমিকা তাঁর উপর বিশ্বাসে স্থির আছে বলেই তিনি জীবনের কক্ষপথ সঠিকভাবে পরিভ্রমণ করতে পারছেন। এবং কম্পাসের বহির্বাহুর মতােই ফিরে আসতে পারছেন, যেখানে থেকে শুরু করেছেন সেখানেঃ

“Such wilt thou be to me, who must
Like th’other foot, obliquely run;
Thy firmness makes my circle just,
And makes me end, where I begun.’

এ ধরনের কষ্ট কল্পিত উপমা উদাহরণ অনেক সময় লেখনীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে সুন্দরীর অলক তিলকের মতাে।
প্রেমের মালঞ্চে জন ডান আশাবাদী প্রেমিক। দেহকামনাহীন প্রেমে তিনি বিশ্বাসী নন। শুধু হতাশা, শুধু নিরাশা, শুধু দীর্ঘশ্বাস, শুধু অশ্রু নয় বরং সফল প্রেমের পক্ষে তিনি। গভীর প্রেমের পক্ষে তিনি। প্রিয়ার লজ্জাবনত অক্ষিযুগল তাকে আকর্ষণ করে প্রবলভাবে। এক মুহূর্তের জন্যও প্রিয়ার চোখ থেকে চোখ ফিরাতে চান না। “The Sun Rising’ কবিতায় তিনি বলেন :

 “Thy beams, so reverend, and strong
Why shouldst thou think?
I could eclipse and cloud them with a wink
But that I would not lose her sight so long.’

এ যেন রবীন্দ্রনাথেরঃ

কবে আর হবে থাকিতে জীবন
আঁখিতে আঁখিতে মােদের মিলন।

প্রেমের ক্ষেত্রে আঁখিতে আঁখিতে মিলন প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয় তােলপাড় করা এক অবর্ণনীয় অনুভূতি। প্রেম যেখানে গভীরতা প্রাপ্ত হয়, মান অভিমান যেখানে ঘনত্ব প্রাপ্ত হয় সেখানেই দৃষ্টির এই দৃষ্টি নন্দন অনুভূতি উপলব্ধি সীমায় ধারণ করা সম্ভব। আর ডানের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছিল। তিনি খাটি প্রেমিক। প্রেম, জীবন কাননে কোমল পায়ে পদার্পণ করতে পারে যে কোনাে সময়। এ ব্যাপারে কোনাে ছকে বাঁধা নিয়ম নীতি নেই। কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দেয়া আদর্শ প্রেমিকের আদর্শ নয়। কেননা, যে প্রেমিক কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দেয়, সে মােটেই প্রেমিক নয়। জন ডান এ ব্যাপারে কাণ্ডজ্ঞান বা সময় জ্ঞানের পরিচয় দিতে রাজি নন। The Sun Rising’ কবিতার প্রথম স্তবকের শেষ দুই লাইনে কবি বলেনঃ

Love, all alike no season knows, nor clime,
Nor hours, days, months, which are the rags of time.’

এ যেন ডঃ ভূপেন হাজারিকার কণ্ঠেঃ

‘সময় বা অসময়
এখন না তখন,
ফাগুন, শাওন বুঝে প্রেম আসে না।
সে সময় কখনাে বুঝে না,
প্রেম, সময় কখনাে বুঝে না।

জন ডান নারীর কোমল করস্পর্শের যেমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন, গভীর আস্থায় বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করেন, মরণও তাঁকে তাঁর প্রিয়া থেকে পৃথক করতে পারবে নাঃ

‘Two graves must hide thine and my corse.
If one might, death were no divorce.’

তেমনি দু’একটা কবিতায় নারীর প্রতি বিদ্বেষ এবং অবিশ্বস্ততাও প্রকাশ পেয়েছে বেশ তীক্ষভাবে। Song: (Go and Catch a Falling Star) কবিতায় কবির খেদোক্তিঃ

‘If thou be’est born to strange sights,
Things invisible to see,
Ride ten thousand days and nights,
Till age snow white hairs on thee,
Thou, when thou return’st, wilt tell me
All strange wonders that befell thee,
And swear
No where
Lives a woman true, and fair.
If thou find’st one, let me know,
Such a pilgrimage were sweet,
Yet do not, I would not go,
Though at next door we might meet,
Though she were true, when you met her,
And last, till you write your letter,
Yet she
Will be
False, ere I came, to two or three.

শেষ স্তবকের শেষাংশে কবি বলছেন যে, যদিও একটা নারীকে বিশ্বস্ত পাওয়া যায় তবুও তাকে বিশ্বাস করা যায় না। কারণ তাকে একটা চিঠি লিখতে যে সময় অতিবাহিত হবে, অতটুকু সময়ের মধ্যেই সে অবিশ্বস্ত হয়ে যাবে। প্রতারণাপূর্ণ হয়ে যাবে। কবি আসতে আসতেই সে প্রেম বিলাবে আরাে দুতিন। জনকে। নারী লােভী। এরা একজনে তৃপ্ত হতে চায় না। তাই নজরুল তার দোলন চাঁপা’য় বলেছিলেনঃ
এরা দেবী, এরা লােভী, এরা চাহে সর্বজন প্রীতি!
নারী নাহি হতে চায় শুধু একা কারাে,
এরা দেবী, এরা লােভী, যত পূর্জা পায়, এরা তত আরাে।
ইহাদের অতি লােভী মন একজনে তৃপ্ত নয়’ এক পেয়ে সুখী নয়,
যাচে বহু জন!
Twicknam Garden’ কবিতায় নারীর প্রতি কবির বিদ্বেষী মনােভাবের পরিচয় পাওয়া যায়ঃ

‘Alas, hearts do not in eyes shine,
Nor can you more judge women’s thoughts by tears,
Than by her shadow, what she wears’

ছলনাময়ী নারী জাতটাকে অশ্রু দেখে বিচার করা যায় না। অশ্রু দেখে তার ভালবাসার খাঁটিত্ব বিচার করা যায় না। অশ্রু, অস্ত্র হিসাবেও তারা মাঝে মাঝে ব্যবহার করে পুরুষের হৃদয়রাজ্য দখল করার জন্য অথবা পুরুষকে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য। এ প্রসঙ্গে নজরুল বলেনঃ

নহে নহে প্রিয়, এ নয় আঁখি জল।
এ শুধু শীতের মেঘে,
কপট কুয়াশা লেগে ছলনা উঠেছে জেগে—এ নহে বাদল
এ নয় আঁখি জল।

তবে জন ডানের কবিতায় সর্বত্রই একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে যুক্তির প্রখরতা। প্রবল আবেগের সাথে সবল যুক্তির আড়াআড়ি বুননে তাঁর লেখনীয় গাঁথনি হয়েছে শক্ত সুঠাম। শুধু তরল আবেগে গা • ভাসিয়ে দেননি অথবা শুধু নীরস যান্ত্রিক যুক্তি দিয়ে কবিতাকে বিরস করে তােলেননি। বরং এ দু’য়ের সু সমন্বয় সাধন করেছেন সিদ্ধহস্ত শিল্পীর দক্ষ তুলির টানে। আবেগ এবং যুক্তির একটা সমানুপাতিক সম্বন্ধ তিনি তৈরি করেছেন তাঁর লেখায়। এই সমানুপাতিক মিশ্রণ সম্পর্কে তিনি নিজেই ‘The Good Morrow কবিতায় বলেছেনঃ

‘মিশ্রিত নয় সামানুপাতে ভাঙ্গে সেটা ভাঙ্গে।

আবেগে, উচ্ছাসে, সংযমে, যুক্তিতে, বিষয় বৈচিত্রে নিঃসন্দেহে ম্যাটাফিজিক্যাল কবিদের গুরু ডান একজন উচ্চ মার্গের সাহিত্যরসবেত্তা। তাই বেন জনসন বলেছিলেন, কোনাে কোনাে বিষয়ে ডান বিশ্বের প্রথম কবি’, স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই তাে ডানের কবিতার উদ্ধৃতি টেনেছেন তার শেষের কবিতায়ঃ

‘For God’s sake hold your tongue, and let me love.’

Author

  • John Donne

    সমাজ পরিবার ও ব্যক্তি বিধৃত জীবনকে শুধুমাত্র উচ্ছ্বসিত ভাবাবেগের পরিবর্তে মূখ্যত বুদ্ধিসচেতন, বিশ্লেষণধর্মী, দার্শনিক মনােভঙ্গি নিয়ে উপলব্ধির প্রয়াস জন ডান-এর অভিষ্ট লক্ষ্য ছিল। জীবনের হতাশা নিরাশা, ধূসর ভবিষ্যতের ঊষর মরুতে বিচরণ না করে তিনি জীবনকে তৃণে-শস্যে, ফুলেফসলে সফল দেখতে চান। আর এই মানসে তিনি প্রত্যয়ী, পরিশ্রমী। তাঁর প্রত্যয়ী মনােভাব তাঁকে পৌছে দিয়েছে খ্যাতির উচ্চাসনে। তিনি আবিষ্কার করলেন স্বতন্ত্র কাব্যধারা। ম্যাটাফিজিক্যাল’ কবিতা।

    View all posts