Andrew Marvell’s Life and Work

Andrew Marvell’s Life and Work

ক. প্রকৃতিপ্ৰীতি কাব্যিক অনুভূতির চলমান সারথী। বন-বনানী, ছায়াঘেরা কুঞ্জ বিথীকা, পদ্ম, পলাশ, হিজল, তমাল, কচি কিশলয়, উড়ন্ত হংস বলাকা, সবুজ শ্যামলিমাময় মাঠ-প্রান্তর, চৈতি চাঁদের জ্যোত্সা প্লাবিত রজনী এসব নৈস্বর্গিক ঐশ্বর্য সর্বকালে সর্বদেশে কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী-গল্পী; চিত্রীদের আঁখি পল্লবে স্বপ্লঞ্জল এঁকে দেয়। হৃদসরােবর কল্পনা, আবেগ-উচ্ছ্বাসে দুকূলপ্লাবিত হয়ে ওঠে। ফুটতে শুরু করে সঙ্গীত কাব্য-কবিতার শতদল। মারভেল সেই প্রকৃতি চেতনার কবি। প্রেমের কবি। সৌন্দর্যের কবি। প্রকৃতির কবি। শহুরে সভ্যতার যন্ত্রণাকাতর যন্ত্রজীবন ছেড়ে ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় পল্লী প্রান্তরই তাঁর কবিতার চারণ ভূমি। তবে প্রকৃতিপ্রীতির পাশাপাশি তাঁর কবিতায় স্বদেশানুভূতি, ধর্মতত্ত্ব, প্রেম-বিরহ, হিউমার, আয়রনী, উইট এসবও উঠে এসেছে নিপুণ পরিচর্যায়। এই প্রতিভাধর কবি মারভেল জন্মগ্রহণ করেন ১৬২১ সালের ৩১শে মার্চ, লন্ডনের ইয়র্কশায়ারে। তার বাবা ছিলেন পাদ্রী। মারভেল ছিলেন বাবা মায়ের প্রথম ছেলে এবং পরিবারের চতুর্থ সন্তান। মারভেলের পরে তাঁর আর একটা ভাই মাত্র এক বছর বয়সে মারা গেল। সুতরাং মারভেলই হচ্ছে পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তান। বড় তিন বােন হচ্ছে এ্যানি, মেরী ও এলিজাবেথ। তিন বােনের এক ভাই। বােনদের কোলে কোলে আদরে আদরে বেড়ে উঠেছেন মারভেল। | এই মারভেলই পরবর্তীকালে কন্সটান্টিনােপলে কূটনীতিক হিসেবে কাজ করেন। বন্ধুত্ব অর্জন করেন জন মিলটনের মতাে নামী-দামী কবির। জন মিল্টন এক সময়ে কমনওয়েলথের বৈদেশিক সেক্রেটারি ছিলেন। কিন্তু তাঁর দৃষ্টি শক্তি কমে আসার কারণে মারভেলকে মিলটনের সহকারী নিয়ােগ করা হয় ১৬৫৭ সালে। তাঁর নিজ শহর হাল থেকে তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন এবং আমরণ তিনি পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন।

ছােট বেলায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল একটা গ্রামার স্কুলে। বার বছর বয়সে তিনি যান ক্যামব্রিজে। ১৬৩৮ সালে তিনি বি. এ ডিগ্রি অর্জন করেন। মারভেলের মাতৃ বিয়ােগ ঘটে ১৬৩৮ সালে। ১৬৪১ সালে হাম্বার নদী অতিক্রম করার সময় নৌকা ডুবি হয়ে তার বাবাও মারা যান। সলিল সমাধি হলাে তাঁর। মারভেল তখনও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এম. এ. ক্লাসে পড়ছেন। বাবার মৃত্যু সংবাদ শুনে ছুটে আসলেন বাড়িতে। এরপরে আর তিনি লেখা পড়ায় ফিরে যাননি। ১৬৪২ থেকে ১৬৪৪ সালের মধ্যে তিনি ইতালী, স্পেন, ফ্রান্স, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। মারভেল যখন ক্যামব্রিজের ছাত্র ছিলেন তখন ক্যামব্রিজে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল Richard Lovelace. বিদেশ ভ্রমণ শেষে মারভেল যখন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন তখন তিনি তাঁর এই বন্ধুকে ঘিরে একটি কবিতা রচনা করেন। এটি হচ্ছে ম্যাটাফিজিক্যাল কবি মারভেলের প্রথম প্রকাশিত কবিতা। এরপরে ১৬৪৮ সালে এবং ১৬৫০ সালে তিনি দু’একটা কবিতা রচনা করেন। মারভেল শত শত বা হাজার হাজার কবিতা রচনা করেননি। তাঁর কবিতা সংখ্যায় খুব কম। হাতে গােনা। মাত্র ৪০টি কবিতা রচনা করেন তিনি। মারভেল ল্যাটিন ভাষায়ও দক্ষ ছিলেন। ইংরেজি ভাষায় রচিত এই ৪০টি কবিতা ছাড়াও ল্যাটিন ভাষায় তাঁর দু’চারটি কবিতা পাওয়া যায়।

খ. সাইলােজিজম (Syllogism) মূলত ন্যায় শাস্ত্রের যুক্তিধারা বিশেষ। এতে দুটি প্রতিজ্ঞা বা তথ্য থাকে এবং শেষে একটি সিদ্ধান্ত থাকে। মারভেলের কবিতা সাইলােজিষ্টিক গঠন রীতিতে গঠিত। এরূপ কবিতা তিনটি অংশে বিভক্ত থাকে। প্রথম অংশ ‘If দিয়ে শুরু হয় এবং এ অংশে সসম্যা চি িত করা হয়। দ্বিতীয় অংশ ‘But’ দিয়ে শুরু হয় এবং এ অংশে ঐ সমস্যা সমাধানের পক্ষে নানাবিধ যুক্তি তুলে ধরা হয়। তৃতীয় অংশ ‘Therefore দিয়ে শুরু হয় এবং এ অংশে একটা সিদ্ধান্ত বা উপসংহার টানা হয়। “To His Coy Mistress’ কবিতায় এই গঠনরীতি স্পষ্টভাবে লক্ষ্যণীয়।

‘To His Coy Mistress’ কবিতায় যে লজ্জাবতীর ঘুম ভাঙ্গাতে তিনি চেষ্টা করেছেন, হয়তােবা মারভেল সে লজ্জাবতীর ললিত লতায় শিহরণ জাগাতে পারেননি। তাই মারভেল থাকলেন চিরকুমার। ১৬৭৮ সালের ১৬ই আগষ্ট কূটনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, চিরকুমার কবি মারভেলের জীবনাবসান ঘটে লন্ডনে। তাঁর মৃত্যুর পর ১৬৮১ সালে প্রথম তাঁর কবিতার সংকলন প্রকাশিত হয়। তাঁর কবিতা সংখ্যায় স্বল্প কিন্তু কারুকার্যে, গভীরতায়, গুণে-মানে-মাপে-মাত্রায় চরমােৎকর্ষিত। To His Coy Mistress এবং The Definition of Love’ তাঁর অমর সৃষ্টি। সাহিত্যের কাননে এ ধরনের স্নিগ্ধ মাধুরীময় সৃষ্টি অনুসন্ধানে দুর্লভ, দুর্লক্ষ্য।

ইংরেজি সাহিত্যে রেনেসাঁ যুগের শেষ দিকের কবি এ্যান্ড্রু মারভেলের কবিতাগুলাে তাঁর পূর্বসূরি জন ডানের কবিতার মতাে দুই ভাগে বিভক্ত। যেমন ঃ প্রেমাশ্রয়ী কবিতা ও ধর্মাশ্রয়ী কবিতা।

প্রেমাশ্রয়ী কবিতাগুলাের মধ্যে ‘To His Coy Mistress এবং The Definition of Love’ শীর্ষাসনে রয়েছে। ‘To His Coy Mistress’ কবিতায় কবি এক লজ্জাবতীকে প্রেমের আহবান জানিয়েছেন। সময় চলে যাচ্ছে দ্রুত। যদি তাঁকে সময়ের কাছে পরাজিত হতে হয় সেই আশংকায় কবি তাকে এখনই প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন ?

‘Had we but world enough, and time,
This coyness lady were no crime.’

কবি তাঁর আধাে ফোটা রূপে বিমুগ্ধ। তিনি সেই চপলার প্রতি অঙ্গের পূজা করতেন বহু বছর ধরে যদি তার হাতে অফুরন্ত সময় থাকতঃ ।

“An hundred years should go to praise
Thine eyes, and on thy forehead gaze,
Two hundred to adore each breast:
But thirty thousand to the rest.
An age at least to every part,
And the last age should show your heart.’

বিমুগ্ধ নয়নে উদ্ঘাটন করেছেন তার অঙ্গে অঙ্গে থরে বিথরে সাজান রূপ ঃ

“Now therefore, while the youthful hew
Sits on thy skin like morning dew.?

রবীন্দ্রনাথ যেমন আবিষ্কার করেছিলেন গিরিবালার অঙ্গে অঙ্গে গিরিকাননের সমস্ত সৌন্দর্য।

‘Young Love কবিতায়ও অনুরূপ সুরের অনুসরণ শােনা যায়। এখানে আধাে ফোটা পু সম এক বালিকাকে কবি প্রেমের আহ্বান জানিয়েছেন। কবির আশংকা হয় যে এই মেয়েটি পরিপূর্ণ যৌবনা হতে হতে কবির অথবা মেয়েটির জীবনাবসনও ঘটে যেতে পারে। কাজেই সময়কে পরাজিত করতে হলে এখনই ভালবাসা উচিত। এই বালিকাকে প্রেয়সীরূপে কল্পনা করে বালিকা বধুর সুখ-স্বপনে কবি বিমােহিত। এই চপলা-চঞ্চলা বালিকা ষােল কলায় পরিপূর্ণ যৌবনে পৌঁছতে পৌঁছতে অন্য কোন প্রেমিকের চোখও পড়তে পারে তার উপর। তাই কবি এখনই তাকে প্রেমের মুকুট পরাতে চান। ‘Young Love’ কবিতার শেষ চারটি স্তবকে এ সম্পর্কে কবির বক্তব্য সুস্পষ্ট এবং যুক্তিসমৃদ্ধঃ

‘Now then love me: time may take

Thee before thy time away: Of this need we’ll virtue make,
And learn love before we may. So we win of doubtful fate;
And if good she to us meant, We that good shall antedate,
Or, if ill, that ill prevent. Thus as kingdoms, frustrating
Other titles to their crown, In the cradle crown their king,
So all foreign claims to drown.
So, to make all rivals vain,
Now I crown thee with my love: Crown me with thy love again,
And we both shall monarchs prove.’

‘The Definition of Love’ কবিতায় Spiritual love বা Platonic love এর উপর জোর দেয়া হয়েছে। Physical love-কে কবি এখানে দূরে সরিয়ে প্রাধান্য দিয়েছেন আত্মিক প্রেমকে যা অনন্ত অসীম। দুর্বল কামনা তাঁর এই আত্মিক ভালবাসার রাজ্যে প্রবেশাধিকার পায় না। ইহা বিশুদ্ধ প্রেম, খাটি প্রেম। এ কবিতার শেষ দু’লাইনে কবি বলেছেনঃ

“Is the conjunction of the mind,
And opposition of the stars.’

The Fair Singer’ কবিতায় কবি তাঁর প্রেমিকার দু’টি বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। একটা হচ্ছে তার বাঁকা চোখের দৃষ্টি এবং অপরটি হচ্ছে তার সুরেলা কণ্ঠস্বর। বাঁকা চোখের দৃষ্টি বাকা চুরির মতে আঘাত হানে কবির গভীর মর্মে। কবি তার রসাল চাহনিকে ফিরিয়ে দিতে পারেন না। সেই মায়া হরিণীর চাহনির আবেদন মর্মস্থলে হানে পঞ্চবান। কবি বুঝলেন, ‘ঐ আঁখি কিছু রাখিবে না বাকী। তাই কবি বলেছেন তাঁর সাথে পরাজিত হতে বাধ্য। তারপরে আছে প্রিয়ার সুরেলা কণ্ঠস্বর যা দিয়ে বন্দি করেছে কবির মন। এই দুই সম্মােহিনী শক্তির যে কোন একটা যদি মেয়েটির থাকত তবে কবি হয়ত তার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনতে পারতেন ?

“That while she with her eyes my heart does bind,
She with her voice might captivate my mind.
I could have fled from one but singly fair.’

এছাড়াও রয়েছে তার মেঘ বরণ কেশ। এ যেন ‘ঝরা পালক’-এর কবি জীবনানন্দ দাশেরঃ

‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।

তাই কবি তাঁর সাথে প্রেমের বিনিসুতার মালায় আবদ্ধ হতে বাধ্য। ‘On a Drop of Dew’ Dialogue Between The Resolved Soul and Created Pleasure’ এসব কবিতা হচ্ছে তার ধর্মাশ্রয়ী কবিতা।

Author

  • Andrew Marvell

    মারভেল সেই প্রকৃতি চেতনার কবি। প্রেমের কবি। সৌন্দর্যের কবি। প্রকৃতির কবি। শহুরে সভ্যতার যন্ত্রণাকাতর যন্ত্রজীবন ছেড়ে ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় পল্লী প্রান্তরই তাঁর কবিতার চারণ ভূমি। তবে প্রকৃতিপ্রীতির পাশাপাশি তাঁর কবিতায় স্বদেশানুভূতি, ধর্মতত্ত্ব, প্রেম-বিরহ, হিউমার, আয়রনী, উইট এসবও উঠে এসেছে নিপুণ পরিচর্যায়। এই প্রতিভাধর কবি মারভেল জন্মগ্রহণ করেন ১৬২১ সালের ৩১শে মার্চ, লন্ডনের ইয়র্কশায়ারে। তার বাবা ছিলেন পাদ্রী। মারভেল ছিলেন বাবা মায়ের প্রথম ছেলে এবং পরিবারের চতুর্থ সন্তান। মারভেলের পরে তাঁর আর একটা ভাই মাত্র এক বছর বয়সে মারা গেল। সুতরাং মারভেলই হচ্ছে পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তান। বড় তিন বােন হচ্ছে এ্যানি, মেরী ও এলিজাবেথ। তিন বােনের এক ভাই। বােনদের কোলে কোলে আদরে আদরে বেড়ে উঠেছেন মারভেল। | এই মারভেলই পরবর্তীকালে কন্সটান্টিনােপলে কূটনীতিক হিসেবে কাজ করেন। বন্ধুত্ব অর্জন করেন জন মিলটনের মতাে নামী-দামী কবির। জন মিল্টন এক সময়ে কমনওয়েলথের বৈদেশিক সেক্রেটারি ছিলেন। কিন্তু তাঁর দৃষ্টি শক্তি কমে আসার কারণে মারভেলকে মিলটনের সহকারী নিয়ােগ করা হয় ১৬৫৭ সালে। তাঁর নিজ শহর হাল থেকে তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন এবং আমরণ তিনি পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন।

    View all posts