’বর্তমানে সকল রাষ্ট্রের আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে’ – আলোচনা কর

Introduction to Political Theory

প্রশ্নঃ ’বর্তমানে সকল রাষ্ট্রের আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে’ – আলোচনা কর অথবা, আইনসভা কি? আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ আলোচনা কর

ভূমিকা

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আইনসভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও সাম্প্রতিক সময়ে এর ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। আইনসভা মূলত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহায়তা করে, তবে সাম্প্রতিককালে এই প্রক্রিয়ায় আইনসভার প্রভাব ও ক্ষমতার হ্রাস দেখা যাচ্ছে। এর কারণ এবং প্রভাব নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

আইনসভার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

আইনসভা একটি সরকারের সেই বিভাগ যা আইন প্রণয়ন, সংশোধন এবং পরিবর্তনের কাজ সম্পন্ন করে। এটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যেহেতু এটি সরকারকে তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইনি কাঠামো প্রদান করে এবং বিচার বিভাগ আইনসভার প্রণীত আইন অনুযায়ী বিচার কার্য সম্পাদন করে। আইনসভা ছাড়া কোন রাষ্ট্র সুসংহত হতে পারে না, কারণ এটি রাষ্ট্রের আইনগত ভিত্তি স্থাপন করে এবং নাগরিকদের অধিকার ও দায়িত্ব সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে।

আইনসভা কেবল আইন প্রণয়নকারী সংস্থা নয়; এটি একটি প্রতিষ্ঠান যা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। আইনসভার কার্যক্রম বিভিন্ন প্রকারের পদ্ধতিতে সরকারের কার্যকারিতা ও জনগণের কল্যাণে প্রভাব ফেলতে পারে।

আইনসভার প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

  • Oxford Dictionary: “আইনসভা হচ্ছে একদল লোকের সমষ্টি যাদের আইন তৈরি এবং পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে।” এই সংজ্ঞার মাধ্যমে বোঝা যায় যে আইনসভা একটি দল বা সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করে, যারা রাষ্ট্রের আইনগত কাঠামো গঠন করে এবং পরিবর্তন করতে সক্ষম।
  • টকভিল (Tocqueville): “সকল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইনসভা হলো একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে জনগণের প্রাধান্য থাকে।” টকভিলের মতে, আইনসভা একটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান, যা জনগণের স্বার্থ এবং মতামত প্রতিফলিত করে এবং জনগণের শক্তি এবং প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে।
  • ওয়াল্টার বেজহট (Walter Bagehot): “আইনসভা হলো জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের মহান চালিকাশক্তি, যেখানে সকল সমস্যার সমাধান হয় এবং সর্বক্ষেত্রে জনগণের প্রাধান্য থাকে।” বেজহটের মত, আইনসভা শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন নয়, বরং এটি জনগণের সমস্যা সমাধানে সহায়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
  • অধ্যাপক গার্নার (Gamer): “সরকারের সকল বিভাগের মধ্যে আইনসভা নিশ্চিতভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান দখল করে আছে।” গার্নারের সংজ্ঞায় আইনসভাকে সরকারী কাঠামোর মধ্যে একটি কেন্দ্রীয় ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা অন্যান্য বিভাগের কার্যক্রমকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করে।

আইনসভা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে। এটি নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাদের স্বার্থে আইন প্রণয়ন করে, যে আইনগুলি রাষ্ট্রের সুস্থতা এবং সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে সরকার নীতি নির্ধারণ এবং কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পায়, যা একটি রাষ্ট্রের সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক।

আইনসভার কার্যক্রম এবং ভূমিকা আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রাষ্ট্রের আইনগত কাঠামো গঠন করে এবং নাগরিকদের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে।

Read More: রাষ্ট্র কী? আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি আলোচনা কর

আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ

আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করে, যা রাষ্ট্র ও সমাজের প্রেক্ষাপটে প্রভাব ফেলে। নীচে কিছু প্রধান কারণ বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:

১. আইন প্রণয়নে আইনসভার শিথিলতা

আইন প্রণয়ন হলো আইনসভার অন্যতম প্রধান কাজ, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইনসভা এই কাজে ক্রমশ শিথিল হয়ে উঠেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া সরকার বা শাসন বিভাগের পক্ষ থেকে শুরু হয় এবং আইনসভায় তা মাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করা হয়। এতে আইনসভার নিজস্ব প্রণোদনা এবং কার্যকরী ভূমিকা হ্রাস পায়। এছাড়া, দলীয় শৃঙ্খলার কারণে সংসদ সদস্যরা প্রায়শই নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন না এবং সরকার প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী ভোট দিতে বাধ্য হন, যা তাদের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করে।

২. দলীয় ব্যবস্থার কঠোরতা

দলীয় শৃঙ্খলা এবং দলীয় নেতৃত্বের কঠোর নিয়ন্ত্রণ আইনসভার সদস্যদের স্বাধীনতা এবং ক্ষমতা সীমিত করে দেয়। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনো সদস্যের জন্য মতামত প্রকাশ বা ভোট দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, কারণ এর ফলে দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এর ফলে, আইনসভার কার্যক্রম একটি দলীয় প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে ব্যক্তিগত মতামত ও চিন্তা-ভাবনার স্বাধীনতার কোনো স্থান নেই। দলীয় শৃঙ্খলার কারণে আইনসভার সদস্যরা প্রায়শই দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য হন, যা আইনসভার কার্যকারিতা হ্রাস করে।

৩. জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আইনসভার ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়েছে। জাতীয় সংকট বা আন্তর্জাতিক চাপের কারণে অনেক সময় আইনসভা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না এবং সরকারের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে হয়। আন্তর্জাতিক চুক্তি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট বা জাতীয় জরুরি অবস্থা আইনসভার ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বা শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রভাব থাকে, তখন আইনসভা তাদের মতামত ও সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়, যা তাদের স্বাধীনতাকে হ্রাস করে।

৪. সদস্যদের অযোগ্যতা

আইনসভার অনেক সদস্যের প্রয়োজনীয় শিক্ষা, দক্ষতা, এবং অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে, যা তাদের কার্যকরী ভূমিকা পালনে বাধা সৃষ্টি করে। অযোগ্য সদস্যদের উপস্থিতি আইনসভার ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হন। এটি আইনের মান ও কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং আইনসভার ভূমিকা কেবল আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়। এছাড়া, এসব অযোগ্য সদস্য প্রায়শই দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে ব্যর্থ হন, যা আইনসভার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।

৫. জনসাধারণের মনস্তত্ত্ব

জনসাধারণের মানসিকতার পরিবর্তন এবং শাসন বিভাগের প্রতি আগ্রহ আইনসভার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছে। জনসাধারণ প্রায়শই শাসন বিভাগের কার্যক্রমকে আইনসভার থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়, কারণ শাসন বিভাগ বাস্তবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নীতিনির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করে। ফলে, আইনসভার ভূমিকা জনগণের দৃষ্টিতে কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া, জনগণের মাঝে যে শাসন বিভাগের ক্ষমতা ও প্রভাবের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা আইনসভার ক্ষমতাকে হ্রাস করেছে এবং শাসন বিভাগের প্রাধান্য বাড়িয়েছে।

৬. আইনসভার সদস্যদের সংসদীয় গুণগত যোগ্যতার মান হ্রাস

আইনসভার সদস্যদের গুণগত যোগ্যতার মান হ্রাস পাওয়ায় আইনসভা তার পুরোনো গৌরব হারিয়েছে। বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষিত ব্যক্তিদের অনুপস্থিতি সংসদীয় আলোচনার মান হ্রাস করেছে এবং তা সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া, সংসদীয় বিতর্কের সময় প্রায়শই অর্থহীন বক্তব্য প্রদান করা হয়, যা সাধারণ মানুষের কাছে আইনসভার গুরুত্বকে কমিয়ে দেয়।

৭. স্বার্থগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা করতে ব্যর্থতা

আগে আইনসভা ছিল জনগণ এবং শাসন বিভাগের মধ্যে সংযোগের প্রধান মাধ্যম, কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে, আইনসভার ক্ষমতা এবং প্রভাব অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। পেশাগত গোষ্ঠী এবং অন্যান্য স্বার্থগোষ্ঠীর প্রভাব এখন শাসন বিভাগে বেশি, যা আইনসভার ক্ষমতাকে দুর্বল করেছে। স্বার্থগোষ্ঠীগুলির সাথে আইনসভার সদস্যদের সঠিকভাবে যোগাযোগ না থাকার কারণে অনেক সময় আইনসভা প্রয়োজনীয় সমর্থন পায় না, যা তাদের কার্যকারিতা এবং প্রভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৮. ক্ষমতার লোভ

আইনসভার অনেক সদস্য অতিমাত্রায় ক্ষমতার লোভে আক্রান্ত হয়েছেন, যা তাদের জনগণের কল্যাণের থেকে ব্যক্তিগত স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা তৈরি করেছে। ক্ষমতার লোভ এবং স্বার্থপরতার কারণে তারা আইনসভাকে দুর্বল করেছে এবং শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

৯. জরুরি অবস্থায় ব্যর্থতা

জরুরি অবস্থায় আইনসভা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, যা আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যায়। জরুরি পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শাসন বিভাগের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যার ফলে আইনসভার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

১০. অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন

আইন প্রণয়নের ক্ষমতা অনেক সময় শাসন বিভাগের হাতে ন্যস্ত করা হয়, যা আইনসভার ক্ষমতাকে সীমিত করে। সময়ের অভাব, জরুরি অবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন, এবং আইনসভার সদস্যদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের অভাবের কারণে শাসন বিভাগকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়।

১১. আলোচনার সুযোগের অভাব

আইনসভায় আলোচনা ও বিতর্কের সুযোগের অভাবের ফলে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া প্রায়শই একপাক্ষিক হয়ে পড়ে। অনেক সময়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যথাযথভাবে আলোচনা করা হয় না এবং একমাত্র প্রধান দলের সিদ্ধান্ত বা মতামতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বিরোধী দলের মতামত এবং প্রস্তাবনার গুরুত্ব কমে যায়, যার ফলে আইন প্রণয়নের সময় প্রয়োজনীয় সমালোচনা ও পর্যালোচনা থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে, আইনগুলোর মান এবং কার্যকারিতা প্রভাবিত হয় এবং জনগণের জন্য কার্যকরী নীতি তৈরির সম্ভাবনা হ্রাস পায়। এ ছাড়া, আলোচনার অভাবে নতুন আইনের প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন কিভাবে হবে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না, যা আইনসভার কার্যকরী ভূমিকা হ্রাস করে।

১২. আইনসভার সদস্যদের স্বার্থপর মানসিকতা

আইনসভার সদস্যদের মাঝে স্বার্থপর মানসিকতা অনেক সময় তাদের সামগ্রিক কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। ব্যক্তিগত স্বার্থ, ক্ষমতার লোভ, এবং ভাতা-ভাচুর স্বার্থবিরোধী মনোভাব আইনসভার কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সদস্যদের কিছু ক্ষেত্রে, সরকারি পদ-পদবী এবং আর্থিক সুবিধার প্রতি আগ্রহ বেশি হওয়ার কারণে, তারা জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেন। এই স্বার্থপরতা আইনসভায় সত্যিকারের আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে বাধা দেয় এবং এটি আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া এবং আইনসভার ভূমিকার প্রতি জনগণের বিশ্বাস কমিয়ে দেয়।

১৩. গণসংযোগের অভাব

আইনসভার সাথে জনগণের সম্পর্কের অভাব বা দুর্বলতা আইনসভার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। আইনসভা এবং জনগণের মধ্যে সুসংহত যোগাযোগ না থাকার কারণে, সাধারণ মানুষ তাদের মতামত, উদ্বেগ এবং অভিযোগ তুলে ধরতে পারেন না। গণসংযোগের অভাব আইনসভার কার্যকরী ভূমিকা এবং জনগণের সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান নিশ্চিত করতে বাধা দেয়। জনগণ আইনসভা সম্পর্কে সচেতন না থাকলে, তারা তাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতে পারে, যা আইনসভার প্রতি আস্থার অভাব সৃষ্টি করে এবং জনগণের স্বার্থে কার্যকরী নীতি গঠনকে কঠিন করে তোলে।

১৪. অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ

অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের অভাব আইনসভার ক্ষমতাকে হ্রাস করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আইনসভার সদস্যদের প্রস্তাবিত বাজেট, অর্থনৈতিক নীতি, এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও পর্যালোচনার অভাব রয়েছে। এই অভাবের কারণে, আইনসভা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন এবং পরিমাপ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারে না। ফলে, অনেক সময় আইনসভার প্রস্তাবিত নীতিগুলি বাস্তবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সাথে মেলে না এবং সরকারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের উপর কার্যকরী তদারকি সম্ভব হয় না। অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের অভাবে, আইনসভা প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সংস্কার এবং পরিবর্তনের জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হয় না, যা আইনসভার ক্ষমতা এবং প্রভাবকে হ্রাস করে।

Read More: রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর

উপসংহার

উপরোক্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আইনসভার ক্ষমতা ও প্রভাব ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রভাবে শাসন বিভাগের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আইন বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। যদিও আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, তবুও এটি এখনো একটি সংযোগসাধনের মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনসভার ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পেলেও এটি এখনো একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে।

Leave a Comment