রাষ্ট্র কী? আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি আলোচনা কর

Introduction to Political Theory

ভূমিকা:

রাষ্ট্র একটি অনন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যা মানুষের জীবনকে সুসংগঠিত করে এবং তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। রাষ্ট্রের ধারণা এবং তার উদ্দেশ্যসমূহ বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে। প্রাচীন কালে গ্রিক দার্শনিক প্লেটো এবং এরিস্টটল রাষ্ট্রকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেছিলেন। তাদের মতে, সুন্দর ও মঙ্গলময় জীবন প্রতিষ্ঠার জন্যই রাষ্ট্রের প্রয়োজন। আধুনিককালে, রাষ্ট্র একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন হওয়ার পাশাপাশি জনকল্যাণ ও মানবাধিকারের রক্ষাকর্তা হিসেবে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রের প্রকৃতির উপরই তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ভর করে, এবং এই লক্ষ্যসমূহ সমাজের সর্বস্তরে শান্তি, নিরাপত্তা, ও প্রগতি নিশ্চিত করতে সহায়ক।

Read More: Introduction to Political Theory’s Questions and Answers

রাষ্ট্রের প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

রাষ্ট্র এমন একটি জনসমাজ যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্য স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। এটি জনসংখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত, যেখানে আইন এবং শাসন কাঠামো বিদ্যমান, এবং এর উদ্দেশ্য জনগণের শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্জেস বলেছেন, ‘‘একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিক দিক থেকে সংগঠিত জনসমষ্টিই হল রাষ্ট্র।’’

অধ্যাপক গার্নার এর মতে, ‘‘রাষ্ট্র হল সাধারণভাবে বৃহৎ এক জনসমাজ যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত এবং যার একটি সুসংগঠিত সরকার রয়েছে এবং এই সরকারের প্রতি অধিকাংশ জনগণ স্বাভাবিক আনুগত্য প্রদর্শন করে থাকে।’’

আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি (Functions of the Modern State):

আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি বিস্তৃত এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অপরিহার্য। রাষ্ট্রের কার্যাবলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: অপরিহার্য কার্যাবলি এবং ঐচ্ছিক কার্যাবলি।

ক. অপরিহার্য কার্যাবলি (Essential Functions):

এই কার্যাবলি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। রাষ্ট্র যদি এই কার্যাবলি সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে তার অস্তিত্বই বিপন্ন হতে পারে।

  1. প্রশাসন পরিচালনা সংক্রান্ত কাজ: প্রশাসনের কার্যাবলি পরিচালনা করা রাষ্ট্রের প্রধান কাজগুলোর একটি। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো দেশের পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সরকারী বিভাগ, মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য প্রশাসনিক সংস্থা। সঠিক প্রশাসনিক কার্যাবলির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সার্বিক নীতি নির্ধারণ, কর্মচারী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়। প্রশাসন পরিচালনার কাজের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও অন্তর্ভুক্ত।
  2. অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা: দেশের অভ্যন্তরে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। একটি সুসংহত এবং স্থিতিশীল সমাজ গঠনের জন্য অভ্যন্তরীণ শান্তি অপরিহার্য। রাষ্ট্র পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গঠন করে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। এছাড়া, আঞ্চলিক ও জাতীয় স্তরে প্রশাসনিক সংস্থাগুলি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধ রোধ করতে কাজ করে। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিয়ন্ত্রণ, এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণও এই দায়িত্বের অন্তর্গত।
  3. সার্বভৌমত্ব রক্ষা: সার্বভৌমত্ব রক্ষা না করলে রাষ্ট্র বিলুপ্ত হয়। তাই রাষ্ট্রের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য সামরিক বাহিনী গঠন এবং দেশের সীমান্ত সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য রাষ্ট্র বাহ্যিক আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কূটনৈতিক সম্পর্কও স্থাপন করে, যা যুদ্ধের সম্ভাবনা কমায় এবং শান্তি রক্ষায় সহায়তা করে। আন্তর্জাতিক মিত্রতার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং বিশ্ব রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
  4. অর্থনৈতিক কার্যাবলি: অর্থনীতি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে কর নির্ধারণ, আর্থিক নীতি প্রণয়ন, এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। কর ব্যবস্থার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার বিভিন্ন কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে। বাজেট প্রণয়ন, জনকল্যাণমূলক প্রকল্প পরিচালনা, এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার জন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কার্যাবলি অপরিহার্য। এছাড়া, অর্থনৈতিক নীতিমালা দ্বারা রাষ্ট্র দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়নে সহায়তা করে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে।
  5. বিচারকার্য: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কাজ। বিচার বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্র অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করে এবং নিরপরাধীকে সুরক্ষা দেয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুষ্ঠু বিচারিক ব্যবস্থা অপরিহার্য। বিচারিক কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে অপরাধীদের বিচার, আইন প্রয়োগ, এবং বিভিন্ন বিরোধ মীমাংসা করা। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে এবং জনগণের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি জাগ্রত করে।
  6. আইন প্রণয়ন: সমাজের সুষ্ঠু শাসন নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন, পরিবর্তন, এবং প্রয়োগ করা রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য দায়িত্ব। আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র সমাজের নৈতিক ও সামাজিক মান বজায় রাখে এবং জনগণের অধিকার রক্ষা করে। সংসদ বা আইনসভা এই কাজটি সম্পন্ন করে, যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের স্বার্থে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া দ্বারা রাষ্ট্র সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করে এবং সমাজের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।
  7. কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন: অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং তা রক্ষা করা আধুনিক রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক স্তরে তার অবস্থান সুসংহত করে এবং বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ থেকে নিজেকে রক্ষা করে। এই সম্পর্কের ভিত্তিতে রাষ্ট্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন করে, যা তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হয়। এছাড়া, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সাথে অংশগ্রহণ করে রাষ্ট্র বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, এবং উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে।
  8. জনগণের জানমালের নিরাপত্তা: জনগণের জানমাল রক্ষা করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কাজ। রাষ্ট্র এটি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে এবং শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে কাজ করে। এছাড়া, বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় রাষ্ট্র জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ সরবরাহ এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা।
  9. অধিকার রক্ষা: আধুনিক রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য কাজ হলো নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা। এই অধিকারগুলো সমাজের সার্বিক কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্র সংবিধানের মাধ্যমে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে এবং তা লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা, এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অধিকার। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এই অধিকারগুলো সুরক্ষিত রাখা এবং নাগরিকদের জন্য একটি নিরাপদ এবং সমৃদ্ধিশালী পরিবেশ নিশ্চিত করা।

খ. ঐচ্ছিক কার্যাবলি (Optional Functions):

এই কার্যাবলি রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য তা অপরিহার্য। ঐচ্ছিক কার্যাবলি সমাজের সার্বিক উন্নয়ন, জনকল্যাণ, এবং রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  1. শিক্ষা বিস্তার: শিক্ষা বিস্তার রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐচ্ছিক কার্যাবলি, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার জনগণের মানসিক ও সামাজিক বিকাশ নিশ্চিত করে। রাষ্ট্র প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান, এবং নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচি চালানো রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতির প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া, পেশাগত ও কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন এবং নারী শিক্ষার প্রসারিতকরণও শিক্ষার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  2. স্বাস্থ্যসেবা প্রদান: জনগণের সুস্থতা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে রাষ্ট্র জনগণের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করে। রাষ্ট্র বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে জনগণ সুলভে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে। রাষ্ট্র সাধারণ জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করতে বিভিন্ন সামাজিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি চালু করে, যেমন টিকাদান কর্মসূচি, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, এবং জনস্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম। এছাড়া, স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার এবং রোগপ্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণও স্বাস্থ্যসেবার অন্তর্গত।
  3. জনকল্যাণমূলক প্রকল্প পরিচালনা: রাষ্ট্র জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প পরিচালনা করে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। রাষ্ট্র এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে। জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির মাধ্যমে দরিদ্র, বৃদ্ধ, এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়, যেমন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, এবং প্রতিবন্ধী ভাতা। এছাড়া, খাদ্য নিরাপত্তা, পানীয় জলের সরবরাহ, এবং আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করাও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের অন্তর্গত।
  4. যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন: যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে। রাস্তা, রেলপথ, বিমানবন্দর, এবং সমুদ্রবন্দর গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ রাষ্ট্রের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির প্রধান অংশ। রাষ্ট্র জনগণের জন্য সহজে এবং সুলভে যোগাযোগের সুবিধা প্রদানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, যেমন মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, এবং সেতু নির্মাণ। এছাড়া, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়তা করে। ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও আধুনিক রাষ্ট্রের যোগাযোগের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
  5. শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়ন: শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়ন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র বিভিন্ন শিল্পখাতের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে, যেমন কৃষি, পোশাক, ও প্রযুক্তি খাত। শিল্প ও বাণিজ্য খাতের উন্নয়নে রাষ্ট্র বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান, কর মওকুফ, এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করে। রাষ্ট্র বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য সহজতর ব্যবসা পরিবেশ তৈরি করে। এছাড়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন এবং রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারে রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়ক হয়।
  6. পরিবেশ সংরক্ষণ: পরিবেশ সংরক্ষণ রাষ্ট্রের একটি ঐচ্ছিক কার্যাবলি, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করতে সহায়ক। রাষ্ট্র বন সংরক্ষণ, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, এবং বায়ু ও জল দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্র বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে এবং পরিবেশবান্ধব প্রকল্প গড়ে তোলে। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
  7. সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও সংরক্ষণ: রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক কার্যাবলির মধ্যে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। রাষ্ট্র বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং তা প্রচারের জন্য কাজ করে। রাষ্ট্র বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, এবং উৎসব আয়োজন করে জাতীয় ঐক্য ও ঐতিহ্যের প্রচার করে। এছাড়া, সৃজনশীল শিল্পের উন্নয়ন, যেমন সঙ্গীত, নৃত্য, চিত্রকলা, এবং সাহিত্য, রাষ্ট্রের সংস্কৃতির অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  8. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম: প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য জরুরী অবস্থায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা। রাষ্ট্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বাভাস, প্রস্তুতি, এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করে। ত্রাণ কার্যক্রমের মধ্যে খাদ্য, পানি, ওষুধ, এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকে। রাষ্ট্র দুর্যোগকালীন অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পুনর্বাসন, এবং তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য রাষ্ট্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সাথে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করে।
  9. বৈদেশিক সাহায্য ও সহায়তা প্রদান: রাষ্ট্র বৈদেশিক সাহায্য ও সহায়তা প্রদান করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে বা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে সহায়তা প্রদান করে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক স্তরে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করে। রাষ্ট্রের এই ধরনের কার্যক্রম মানবিক সাহায্য, খাদ্য সামগ্রী প্রদান, আর্থিক সহায়তা, এবং চিকিৎসা সহায়তার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলে।

Read More: Introduction to Political Theory’s Questions and Answers

উপসংহার:

পরিশেষে, আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলি তার জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নের উপর কেন্দ্রীভূত। রাষ্ট্রের কাজ শুধুমাত্র শাসন এবং আইন প্রণয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কার্যাবলির মাধ্যমেও সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারতার সাথে সাথে রাষ্ট্রের কার্যাবলি আরও ব্যাপক এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সমাজের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের দায়িত্বের পরিধি ও গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হলো জনকল্যাণ নিশ্চিত করা এবং একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও উন্নত সমাজ গড়ে তোলা।

Leave a Comment