The Faerie Queene by Edmund Spenser এর কাব্যিক মূল্যায়ন ও সারমর্ম

The Fairy Queene : Book I : Canto I By Edmund Spenser

কাব্যিক মূল্যায়ন

এডমন্ড স্পেনসারকৃত ভুবন বিখ্যাত গ্রন্থ “The Faerie Queene” প্রকাশিত হয় ১৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে। বইটি তিনটি পর্বে প্রকাশিত হয়। মূলত ‘ফেয়ারি কুইন’ স্পেনসার রচনা করেছেন মহাকাব্যিক আবহে। এ কাব্যে একজন অনুগত ধর্মপ্রাণ, সৎ বীর নাইটের আখ্যান রচিত হয়েছে, যে নাইট রানির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণে নিজেকে সমর্পণ করেছে। যে নাইট সর্বদা অকুতােভয়, সে ড্রাগনের সাথে, দানবের সাথে লড়াই করে জয়ী হয়, সহযােগিতা করে অত্যাচারিত মানুষদের, দুর্বলদের পাশে দাঁড়ায় বন্ধুর মতাে। এমনি এক দুঃসাহসী নীতি আদর্শের মূর্ত প্রতীক নাইটকে আশ্রয় করে রচিত হয়েছে এ বিশাল কাব্যের প্রথম পর্বটি।
কাব্যের শুরুতেই স্পেনসার জানান তিনি সারা জীবন রাখালিয়া গাঁথা, গ্রাম্য মেষপালকদের জীবনাচরণ, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আর পল্লী প্রকৃতি নিয়ে কবিতা রচনা করেছেন। অথচ আজ তিনি বাধ্য হচ্ছেন কঠিন এক কর্ম করার তরে, কবি বলেন, তিনি আসলে গ্রাম্য গাঁথা রচনার কবি, তিনি প্রকৃতির কোমলরূপের প্রকাশ ঘটাতে সিদ্ধহস্ত, তিনি এমন জলদগম্ভীর, কঠিন ভাব গাম্ভীর্যতায় পরিপূর্ণ বীরগাথা অথবা মহাকাব্য রচনা করতে পারবেন না, তিনি বলেন, তিনি এই কর্মের উপযুক্ত নন। তিনি কাব্যকলার দেবীর প্রতি অনুরােধ জানিয়েছেন তার এ দায়িত্বভার যেন তিনি সঠিকভাবে পালন করতে পারেন, সহায়তা চেয়েছেন তিনি কাব্যকলার দেবীর কাছে।
কাব্যের শুরুতেই কবি রাজা আর্থারের বীর নাইটদের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। কেমন করে একজন বীর নাইট একজন রূপসী নারী খুঁজতে গিয়ে চষে ফেলেছিল পুরােটা জগৎ। সেই সব মহতী নাইটদের গাঁথা রচনা করার জন্যই তিনি শক্তি চাইলেন চিরকুমারী সঙ্গীতের দেবীর কাছে। আর অন্য দিকে প্রেমের দেবতা কিউপিড আর সৌন্দর্যের দেবীর ভেনাসকেও আহবান করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি যুদ্ধ দেবতা মার্সকেও পাশে চেয়েছেন সাহস জোগাতে। তিনি চাইছেন দেবতা মার্স যেন তাঁর মারমুখী স্বভাব ভুলে মানবের জয় গান গাইতে গাইতে হাজির হয় কবির সামনে। আর কবিও মার্সের সহায়তায় মহান মানবিক প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে রচনা করবেন মহতী এক কাব্যগাঁথা।
তিনি ইংল্যান্ডের রানির জয়গান গেয়েছেন তাঁর কাব্যের সূচনাতে। তিনি রানির আশীর্বাদ চেয়েছেন, যেন রানির আশীর্বাদ তার দৃষ্টিতে আলােকও শিখা জ্বেলে দেয়। তিনি চান রানি দেবী উনার মতাে সবার সামনে প্রতিভাত হােক। তিনি মূলত রানি এলিজাবেথের কথাই বলেছেন। তিনি চাইছেন রানির আশীর্বাদ যেন তার কাব্য রচনার ক্ষেত্রে আশীর্বাদ হিসেবে ঝরে পড়ে।
কাব্যের প্রথম পর্ব উন্মােচিত হয় এক মহান বীর নাইটের যাত্রার মধ্য দিয়ে। যে নাইট সর্বদা পরিভ্রমণ করে সারা দেশ জুড়ে, মাঠ-ঘাট পথে-প্রান্তরে সহায়তা দেয় দুর্বলদের, অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সদা লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকে সে। গভীর আত্মবিশ্বাস আর প্রচণ্ড সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে চলেছে এ কাব্যের নাইট। যেকোনাে বিরূপ পরিস্থিতি, যেকোনাে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে নিজেকে জড়াতে সর্বদা প্রস্তুত সে। মহতী এই নাইটের বুকে আছে মহান যিশুর ক্রুশ চিহ্ন। সে ক্রুশ চিহ্ন রক্তের রঙে অংকিত। এতে বােঝা যায়, নাইট মহান যিশুর অনুগামী, আর তাঁর কর্মকাণ্ডেও নাইট এ পথের অনুগামী। মানব কল্যাণই যেন তার প্রধান ব্রত। | নাইট রানি গ্লোরিয়ানার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে, এ বীর যােদ্ধা সদা রানির আদেশ মতােই মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করেছে। রানি যেন অলক্ষ্যে তাকে জোগায় সাহস আর অনুপ্রেরণা। রানির অনুপ্রেরণায় সে যে কোনাে বিপদে সর্বদা ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। যুদ্ধ করতে প্রস্তুত সদা ড্রাগন আর ভয়াল জীবদের বিরুদ্ধে।
এগিয়ে চলেছে নাইট আগে আগে, তারই পিছে সাদা ধবধবে এক গাধায় বসে যাচ্ছে এক রূপসী যুবতী, মােহনীয় রূপের অধিকারী এই রমণী মূলত এক রাজার কন্যা, যে রাজার পুরাে রাজ্যপাট ধ্বংস করেছে ড্রাগন, নিহত পুরাে রাজপরিবার, শুধু নাইট উদ্ধার করে এনেছেন এই রাজকন্যাকে যার নাম উনা। উনা আর এক বামনাকৃতির ভাড়সদৃশ মানুষ চলেছে নাইটের পেছনে পেছেনে। অকস্মাৎ প্রকৃতি বিরােধিতা করল, ঝর ঝর ধারায় নামল বৃষ্টি, নাইট আর কুমারী উনা দুজনেই গিয়ে ঠাই নিল এক নিরিবিলি নিরাপদ স্থানে। এখানে নিরিবিলিতে স্থান পেয়ে দুজনে যেন খুশিই হলাে। একে অপরকে আরাে কাছে থেকে কিছুটা জানার সুযােগ পেল তারা। দুজনের ঠাই হলাে নির্জন নিরিবিলি এক বাগিচায় যা লােক চক্ষু হতে দূরে। দুজনে নিজেদের দুর্যোগ হতে রক্ষা করতে ক্রমে ঢুকে গেল অরণ্যের গভীরে। চারপাশের প্রকৃতির অপরূপ শােভা মুগ্ধ করল দুজনকে। ঝড় জল থেমে গেলে নাইট আর রাজকন্যা উনা যাত্রা শুরু করল। কিন্তু তাদের যেন কোথায় ভুল হয়েছে, অরণ্য হতে বেরুতে পারছে না তারা, বার বার ভুল করে একই স্থানে পরিভ্রমণ করছে। এভাবে তারা ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করেই সামনে পেয়ে গেল এক পাহাড়ি গুহা, তখন আঁধার নেমে এসেছে, নাইট দ্রুত চাইল সে গুহায় আশ্রয় নিতে।
রাজকন্যা উনা এই বলে সাবধান করল যে, ভুলের বশবর্তী হয়ে হঠাৎ করে কোনাে বিপদের মাঝে পা দেয়া চলবে না। অন্ধকার গুহায় দানব কিংবা কিই না কী আছে তা কে বলবে। অতএব যে কোনাে উদ্যোগ নেয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নাইট জানালেন তার পক্ষে ভয় দেখে পিছু হটা লজ্জাকর ব্যাপার। নারী বললেন, ‘অবশ্যই আপনার কথা ঠিক তবে চারপাশে ভালাে করে দেখে নেয়া উচিত। কারণ এ অরণ্য বড়ােই ভীতিকর অরণ্য মনে হয়। গােলক ধাঁধার কারণে, পথ ভুল হওয়ার কারণে রাজকন্যা উনা নাইটকে সতর্ক করেন যে, এমন গােলকধার মাঝে কোন গােপনীয় গুপ্ত রহস্য থাকাটা একেবারেই অস্বাভাবিক কোনাে ব্যাপার নয়। হঠাৎ করেই বামনাকৃতির লােকটা একটা হুঁশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করল এই বলে যে, এ অরণ্য মানুষের বাসের উপযােগী অরণ্য নয়, অতএব, এখান থেকে দ্রুত পালাও। কিন্তু নাইট এ ব্যাপারে সম্মত হলাে না, সে পালানাের ব্যাপারটাকে এক কাপুরুষােচিত ব্যাপার মনে করল। নাইট জানালেন তার পক্ষে কোনােক্রমেই এ ক্ষেত্র হতে পালানাে উচিত হবে না। নাইট তার স্বভাবসিদ্ধ সাহস নিয়ে এগুলাে অন্ধকার গুহার দিকে। নাইটের অস্ত্রের ঝিলিক গুহার অন্ধকার দূর করতেই এক দানবীয় দৃশ্যের অবতারণা হলাে তাঁর সামনে। নাইট দেখতে পেলেন, অর্ধেক সর্প আর অর্ধেক ভয়াল মানবীরূপী এক দানবী বসে আছে গুহার ভেতরে। যে দানবীর ঊর্ধ্বাংশ নারীদেহ আর নিম্নাঙ্গ পুরাে সাপ। বড়ই ভীতিকর সেই দৃশ্য। দানবী গুহার নােংরা মাটিতে শুয়ে ছিল, বিশাল লেজটা তার ছড়ানাে ছিল পুরাে গুহা জুড়ে। নাইট দেখলেন দানবীর শরীরে অনেক ক্ষত, নাইট বুঝতে পারলাে অনেক যুদ্ধের চিহ্ন শরীরে ধারণ করে আছে দানবী। হাজার হাজার ছানাপােনা একবার বের হচ্ছে তার মুখ হতে, আবার ঢুকে যাচ্ছে তার মুখগহ্বরে। নাইট মােটেই ভয় পেল
এই দানবীকে, প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে আক্রমণ করল তাকে। শেষে জয়ী হলাে নাইট এই দানবীকে হত্যা করে। আবার শুরু হলাে যাত্রা, এবার আর কোনাে গােলকধাধা নয়, পথ পেয়ে গেল তারা সামনে এগুনাের।
পথ চলতে চলতে তারা পৌছল এসে এক সমতল ক্ষেত্রে, মনােরম, সবুজ বাগিচা ঘেরা এক স্থান, সেখানে তারা সাক্ষাৎ পেল এক সাধুজনের, যে সদা ঈশ্বর আরাধনায় মগ্ন। সেখানে সেই সাধুর আবাসে রাত কাটানাের প্রস্তুতি নিল তারা। সাধু আসলে ছিল একজন যাদুকর, প্রেত্মাতাদের কাজে লাগাত সে। দানবীর সাথে যুদ্ধ ক্লান্ত নাইট ঘুমিয়ে পড়লেন গভীর নিদ্রায়। তার ঘুমের মাঝে বৃদ্ধ যাদুকর প্রেতাত্মার সহায়তায় উনাকে নিয়ে এল স্বপ্নে। উনা এসে প্রেম নিবেদন করল নাইটের কাছে, চুম্বন প্রার্থনা করল। আসলে এ সবই ছিল ঐ সাধুরূপী যাদুকরের কীর্তি। কিন্তু নাইট নিজেকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে আটকে রাখলেন, কামনা বাসনা হতে দূরে। নানা প্রলােভনেও নাইটকে যখন বাগে আনা গেল না তখন সে প্রেত্মতা সরে গেল সেখান থেকে। উনার রূপ ধরে নানা লীলালাস্য প্রদর্শন করতে গেলে নাইট উনার সম্মানে তাকে পাঠালেন বিশ্রাম নিতে। আসলে উনার কাছ থেকে নাইট নিজেকে নিরাপত্তার বলয়ে রাখলেন। এভাবেই শেষ হয় প্রথম সর্গ।
প্রথম সর্গে মূলত এডমন্ড স্পেনসার একজন মহৎপ্রাণ মানব দরদী বীর নাইটের শক্তিমত্তা তাঁর চিন্তা চেতনা তাঁর কর্মপ্রবাহের একটা প্রাথমিক চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। পাশাপাশি গৃহহারা, স্বজন হারা এক রাজকন্যাকে এনে দাঁড় করিয়েছেন তার পাশে, যে ছায়ারূপে বিরাজ করে সর্বদা নাইটের পাশে পাশে।

Author

  • Edmund Spenser

    ১৫৫২ সালে এডমন্ড স্পেনসার লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার লিংকনশায়ার থেকে লন্ডনে এসেছিল। ১৫৬১ সালে স্পেনসার মার্চেন্ট টেইলরস বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৫৬৯ সালে প্রেমশুক হল ক্যামব্রিজ থেকে গ্রাজুয়েট হন এবং ক্যামব্রিজ থেকেই ১৫৭৬ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৫৬৯ সালে তাঁর প্রথম প্রকাশনা Anonymous’-এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ১৫৯৫ সালে তাঁর Amoretti and Epithalamion শিরােনামে বিখ্যাত সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। ১৫৯৪ সালের জুন মাসে এলিজাবেথ বয়লি নামের এক সুন্দরী নারীর সাথে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর বিখ্যাত সাহিত্যকর্মের মধ্যে Colin Clout's Come Home Againe (1595), Four Hymns (1596), The Faeire Queene বিশেষ উল্লেখযােগ্য। পেত্রার্কীয় সনেটের অনুসরণে প্রেমবিষয়ক সনেট রচনা করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে খ্যাতিমান হয়ে আছেন।

    View all posts

Leave a Comment