John Milton Life and Work in Bangla
১৬০৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের বিখ্যাত কবি জন মিলটনের জন্ম লন্ডন শহরে। তাঁর পিতা ছিলেন পেশায় একজন কারণিক, শিক্ষিত মানুষ ছিলেন তিনি, তার কর্ম ছিল নানা দলিলপত্রাদি তৈরি করা, তিনি সঙ্গীতের প্রতিও অনুরাগী ছিলেন। মিলটনের মা ছিলেন খুবই ধার্মিক ও সৎ মহিলা।
বিচিত্র মিলটনের শৈশবকাল। সমাজের আর দশটি ছেলেমেয়ের মতাে তিনি খেলাধূলা হৈ হল্লা মােটই পছন্দ করতেন না। ছােটবেলা হতেই মিলটন ছিলেন গম্ভীর প্রকৃতির, চিন্তাশীল, লেখাপড়ার দিকেই ছিল তার বেশি মনোযােগ। সারাক্ষণ তিনি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে নিজেকে আটকে রাখতেন এবং তা দেখে কিছু আত্মস্থ করার চেষ্টা করতেন। মােট কথা মিলটন ছিলেন রীতিমতাে পড়ুয়া।
মিলটনের প্রথম স্কুল জীবন শুরু হয় সেন্টপল স্কুলে। কৃতিত্বের সাথে সেখানকার পাঠ সমাপ্ত করে ষােল বৎসর বয়সে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। ১৬২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেখান থেকে স্নাতক এবং ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মিলটনকে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্স্ট্রাক্টর হিসেবে কাজে যােগদান করার আহবান জানানাে হয়েছিল কিন্তু মিলটন এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বার্মিংহাম শহরের হর্টনে তাঁর পিতার কাছে ফিরে গেলেন। তাঁর ইচ্ছা তিনি ইংল্যান্ডের গির্জার পাদ্রী হবেন। এ সময়ে মিলটন ইংল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেখানকার যুবক-যুবতীদের উচ্ছল জীবনযাত্রা নিয়ে রচনা করেছিলেন অনেক কবিতা। সে সময় মিলটন ইচ্ছে করলে তরুণীদের সাথে প্রেমঘন জীবন যাপন করে স্কুর্তিতে কাটাতে পারতেন কারণ মিলটন ছিলেন অসাধারণ শারীরিক সৌন্দর্যের অধিকারী। যে কোন তরুণীই অতি সহজেই জড়িয়ে যেতাে তাঁর ভালােবাসায়। কিন্তু মিলটন ছিলেন পবিত্রতার প্রতিমূর্তি, তার হৃদয়ে কলুষযুক্ত কাম বাসনার কোন স্থান ছিল না, এ কারণেই তাঁর কবিতায় অকারণ কোন আবেগঘন উচ্ছ্বাস স্থান পায়নি।
১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে মিলটনের মাতা পরলােকগমন করেন। মাতার মৃত্যুর সাথে সাথে সংসারের সাথে তাঁর বন্ধনটা যেন আলগা হয়ে গেল। পিতার অনুমতি নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়লেন দেশ ভ্রমণে। প্রথমে এসে হাজির হলেন প্যারিসে। ঘুরলেন নাইস, জেনােয়া এবং ফ্লোরেন্স শহরে। ফ্লোরেন্সের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর ভাষা ও তাকে মুগ্ধ করেছিল। এ সময়ে তিনি অনেক খ্যাতিমান সাহিত্যিকগণের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। ফ্লোরেন্স হতে তিনি চলে গেলেন রােমে। রােমের প্রাচীন সভ্যতার বিষয়গুলাে তাঁকে রীতিমতাে আকর্ষণ করেছিল। রােমের ল্যাটিন ভাষা ভালােই জানা ছিল মিলটনের। প্রবাস জীবনের অনেকটা সময় তিনি ভ্যাটিকানের লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করে কাটিয়েছেন। ক্ল্যাসিকাল দিকগুলাে তাঁর অন্তকরণকে উদ্ভাসিত করেছিল। সে সময় তিনি তৎকালীন বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর সাথেও আলাপ করেছিলেন। মিলটনের জীবনে এই বিজ্ঞানী যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। প্যারাডাইস লস্ট কাব্যে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রবন্ধে মিলটন এই বিজ্ঞানীকে অমর করে রেখেছেন। ১৬৩৯ সালে মিলটন ফিরে এলেন ইংল্যান্ডে। তখন ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে পিউরিটানদের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
১৬৪০ থেকে ১৬৬০ সাল পর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতার জগতে এক বিপ্লবী স্বাক্ষর রেখেছিলেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে তাঁর মতামতগুলো সেদিন বিপ্লবীদের মনে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এ সময়ে হঠাৎ করেই মিলটনের চোখ সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসকগণ বললেন তিনি যেন বেশি পড়াশুনা, লেখালেখি না করেন। কিন্তু মিলটন কান দিলেন না তাঁদের কথায়, ফলে যা হবার তাই হলো। ১৬৫২ খিষ্টাব্দে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে একেবারে অন্ধ হয়ে গেলেন।
১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে ক্রমওয়েলের মৃত্যুর পর প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রের পতন ঘটে গেল, রাজতন্ত্র ও | ফের, প্রথম চার্লসের পুত্র দ্বিতীয় চার্লস সিংহাসনে আরােহণ করলেন, পদচ্যুত হলেন মিলটন। তার সমস্ত রচনা আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হলাে। মিলটন লন্ডন শহরের নিকটবর্তী ছােট একটি গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। মিলটন এই দুর্দশা আর দুর্যোগে ভেঙ্গে পড়লেন না মােটেই। তিনি এসব মেনে নিয়েই রচনা করলেন তার মহান মহাকাব্য প্যারাডাইস লস্ট।
মিলটনের পারিবারিক জীবনও বেশ ঘটনাবহুল। মিলটন ছিলেন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, অথচ চৌত্রিশ বছর বয়সে তিনি রাজতন্ত্রের সমর্থক এক ধনীর কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন, তাঁর স্ত্রীর নাম মেরী পাউয়েল। ১৬৫২ সালে মেরী মারা গেলে তিনি ক্যাথরিন উডক নামের এক রমণীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু এক বছর পার না হতেই ক্যাথরিনও পরলােকে পাড়ি জমালেন। মিলটন তৃতীয়বার বিয়ে করলেন, স্ত্রীর নাম এলিজাবেথ মিনসেল, তিনি বেশি শিক্ষিত ছিলেন না বটে কিন্তু স্বামীর রচনা কপি করতেন। মিলটন তাঁর শেষ রচনাটি এলিজাবেথকে উৎসর্গ করেছিলেন।
১৬৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ৮ নভেম্বর এই মহান কবি পরলােক গমন করেন।
মিলটন রচিত উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহের মাঝে কাব্য নাট্য ‘কমাস’ শোক কবিতা ‘লাইসিডাস’ অমর কাব্য ‘প্যারাডাইস লস্ট’, ‘প্যারাডাইস রিগেইনড, স্যামসন এ্যানিস্তে ‘লা এলেগ্রো’ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তাঁর গদ্য রচনা ‘অব এডুকেশন’, ‘এ্যারিওপজিটিকা’ বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।